গ্যাসীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য গুলি হল: গ্যাসের অণুগুলির গতিশীলতা, গ্যাসের আকার ও আয়তন, প্রসারণশীলতা, সংকোচনশীলতা, গ্যাসের ব্যাপন, গ্যাসের চাপ ও ঘনত্ব, গ্যাসের উষ্ণতা ইত্যাদি।
(1) অণুর গতিশীলতা:
গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল খুবই কম, এই কারণে গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলি প্রায় স্বাধীন ও বিশৃঙ্খলভাবে ইতস্তত বিভিন্ন গতিবেগে ছুটে বেড়ায়।
(2) আকার ও আয়তন:
গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণের বলের মান অতি কম হওয়ায়, এই ক্ষীণ আকর্ষণ বল অনুগুলিকে একত্রে আবদ্ধ রাখতে পারে না। এই কারণে, অণুগুলি সর্বদাই বিচরণশীল থাকে ফলে গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আয়তন নেই।
(3) প্রসারণশীলতা:
প্রসারণশীলতা গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। চাপ কমালে, গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলির মধ্যেকার ফাঁক বেড়ে যায় ফলে গ্যাসের আয়তন বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে গ্যাসের এই প্রসারণ ক্ষমতা অসীম। যত বড়ো পাত্রেই রাখা হোক না কেন, গ্যাস ওই পাত্রের আয়তন লাভ করে।
(4) সংকোচনশীলতা:
সংকোচনশীলতা গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম। গ্যাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে গ্যাসের অনুগুলি কাছাকাছি চলে আসে ফলে গ্যাস সংকুচিত হয়। এইজন্যে বেশি পরিমাণ গ্যাসকেও অতিরিক্ত চাপের দ্বারা সংকুচিত করে যথেষ্ট ছোটো মাপের পাত্রে রাখা সম্ভব হয়। দেখা গেছে গ্যাসের সংকোচনশীলতা তরল পদার্থের তুলনায় প্রায় 10^5 গুণ।
(5) ব্যাপনশীলতা:
পরষ্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না এমন দুই বা ততোধিক গ্যাসীয় পদার্থকে পরষ্পরের সংস্পর্শে আনলে, গ্যাসের অণুগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশ্রিত হয়ে সমসত্ত্ব মিশ্রন তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন গ্যাসের অণুগুলি পরষ্পরের আন্তরাণবিক অবকাশের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুপ্রবেশ করে মিশে যায়। এই ঘটনাকে ব্যাপন বলে।
(6) ঘনত্ব:
গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলির মধ্যকার দূরত্ব অনেক বেশি। তাই তরল ও কঠিন পদার্থের তুলনায়, একই আয়তনের গ্যাসের মধ্যে অনেক কম পরিমাণ ভর বর্তমান থাকায়, গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্ব অনেক কম হয়।
(7) গ্যাসের চাপ:
গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা বিচরনশীল। এই বিচরণকালে অণুগুলি নিজেদের মধ্যে এবং পাত্রের দেওয়ালের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ ঘটায়। গ্যাসের অণুগুলি এইভাবে পাত্রের দেওয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে সংঘর্ষজনিত কারণে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করে, তাকে গ্যাসের চাপ বলে। উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে গ্যাসের অণুগুলির গতিবেগ বাড়লে তখন গ্যাসের চাপও বেড়ে যায়।
(8) গ্যাসের উষ্ণতা:
গ্যাসের অণুগুলি সর্বদা বিশৃঙ্খলভাবে গতিশীল। তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী, গ্যাসের অণুগুলির গড় গতিশক্তি গ্যাসের উষ্ণতার পরিমাপ নির্দেশ করে। অনুগুলির গতিবেগ যত বাড়ে, গ্যাসের উষ্ণতাও বৃদ্ধি পায়।
(9) ভৌত ধর্ম:
বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে রাসায়নিক ধর্মে পার্থক্য থাকলেও, এদের অধিকাংশ ভৌতধর্ম একই রকমের হয়ে থাকে।
(10) সমপরিবর্তন:
চাপ, উষ্ণতা ইত্যাদি শর্তের পরিবর্তন ঘটলে – সকল গ্যাসের আয়তন, ঘনত্ব ইত্যাদির পরিবর্তন প্রায় সমান ভাবেই হয়।
0 Comments
Post a Comment